সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাকিস্তানকে বাংলাওয়াশ করে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক | আপডেট: মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৪

পাকিস্তানকে বাংলাওয়াশ করে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ
পাকিস্তানের বিপক্ষে চলমান এই সিরিজের আগে ম্যান ইন গ্রিনদের বিপক্ষে কখনোই টেস্ট জিততে পারেনি বাংলাদেশ। তবে ধারাবাহিক পরাজয়ের ইতিহাস বদলে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে টাইগাররা। স্বাগতিকদের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে দশ উইকেটের জয়ের পর এবার দ্বিতীয় ম্যাচটিও ৬ উইকেটের ব্যবধানে জিতে নিয়েছে সফরকারীরা। ফলে শান মাসুদের দলকে ধবলধোলাই করে সিরিজ নিশ্চিত করেছে টাইগাররা। পাকিস্তানের বিপক্ষে সাদা পোশাকে এটিই বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ জয়।

তবে ৫ম দিনে বৃষ্টি হওয়া নিয়ে রাতভর ছিল শঙ্কা। তবে মধ্যরাতে পাকিস্তানের কিংবদন্তি ক্রিকেটার রমিজ রাজা জানালেন, মাঠে খেলা গড়াবে। পাকিস্তানের আবহাওয়া দপ্তরের সূত্রে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে এই কথা জানান তিনি। বাংলাদেশও স্বপ্ন দেখতে থাকে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয়ের। শেষ পর্যন্ত সেই স্বপ্নই সত্য হলো দ্বিতীয় সেশনে এসে। ব্যাটারদের সম্মিলিত প্রয়াসে বাংলাদেশ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে পেল ৬ উইকেটের জয়। 

পাকিস্তানের সঙ্গে টেস্ট এলেই বাংলাদেশের স্মৃতিতে উঠে আসে মুলতান টেস্টে হারের স্মৃতি। দীর্ঘদিন পর সেই হারের ক্ষতে প্রলেপ দিয়েছে রাওয়ালপিন্ডির প্রথম টেস্ট। ১০ উইকেটের জয় পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবার বাংলাদেশকে দিয়েছে টেস্টে পাকিস্তানকে হারানোর স্বাদ। এবার দ্বিতীয় টেস্টেও এলো অসামান্য এক জয়। দিনের শুরুতে দুই উইকেট হারালেও নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক আর মুশফিকুর রহিমরা ঠিকই দলকে নিয়ে যান ১৮৫ রানের ল্যান্ডমার্কে। 

একই সঙ্গে বাংলাদেশের বাইরে এটি টাইগারদের দ্বিতীয় টেস্ট সিরিজ জয়। এর আগে ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বিদেশের মাটিতে সিরিজ জিতেছিল টাইগাররা। এছাড়া বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে চতুর্থবারের মত প্রতিপক্ষকে ধবলধোলাই করলো টাইগাররা। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুইবার এবং জিম্বাবুয়েকে একবার হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ।    

গতকাল ৪২ রানে দিন শেষ করা বাংলাদেশ আজ শেষদিনে জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই দুই ওপেনারকে হারায়। গতকাল আক্রমণাত্মক খেলা জাকির আজ দিনের শুরুতেই মির হামজার বলে আউট হন ব্যক্তিগত ৪০ রানে। এরপর জীবন পাওয়া সাদমানও ইনিংস বড় করতে পারেননি।

দুই ওপেনার ফেরার পর দলের হাল ধরেন অধিনায়ক শান্ত এবং মমিনুল। এ দুজন মিলে পাকিস্তানি বোলারদের বিপক্ষে দেখেশুনেই খেলেছেন। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে স্কোরবোর্ডে রান তুলেছে এ জুটি। মধ্যাহ্নবিরতিতে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২ উইকেটে ১২২ রান।

মমিনুলের সঙ্গে পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের জুটি গড়ে মধ্যাহ্নবিরতিতে গেলেও দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই আউট হন শান্ত। আঘা সালমানের বলে ক্যাচ আউট হয়ে টাইগারদের অধিনায়ক সাজঘরে ফিরেন ব্যক্তিগত ৩৮ রানে। দলীয় ১২৭ রানে শান্ত ফেরার পর ক্রিজে মমিনুলের সঙ্গী হন মুশফিকুর রহিম।

মুশফিক-মমিনুল জুটিতে স্কোরবোর্ডে ওঠে আরও ২৬ রান। এরপর আবরার আহমেদের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে আউট হন মমিনুল, ৩৪ রান করে অভিজ্ঞ এই ব্য্যাটার সাজঘরে ক্রিজে মুশফিকের সঙ্গী হন সাকিব আল হাসান। এই জুটিতেই শেষ পর্যন্ত জয়ের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। মুশফিক-সাকিবের ৩২ রানের জুটিতে জয়ের বন্দরে ভিড়ে টাইগাররা, নিশ্চিত হয় পাকিস্তানকে ধবলধোলাই করে সিরিজ জয়।

প্রথম টেস্টের মত দ্বিতীয়টিতেও ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং সব বিভাগেই দুর্দান্ত খেলেছে টাইগাররা। প্রথম ইনিংসে পাকিস্তান ২৭৪ রানে অল আউট হওয়ার পর ব্যাট করতে নেমে বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছিল টাইগাররা। ২৬ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে বসেছিল বাংলাদেশ। তবে এরপর দলের হাল ধরেন লিটন দাস এবং মেহেদী মিরাজ। এ দুজনের ব্যাটে ২৬২ রান করে অল আউট হয় সফরকারীরা।

১০ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করলেও টাইগার পেসারদের দাপটে সুবিধা করতে পারেনি পাকিস্তান। হাসান মাহমুদ-নাহিদ রানা-তাসকিন আহমেদদের দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্সে স্বাগতিকরা ১৭২ রানে অল আউট হলে জয়ের জন্য বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৮৫। দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানের সবগুলো উইকেটই নিয়েছেন পেসাররা। বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে এমন ঘটনা এবারই প্রথম।

এদিকে চতুর্থ দিনের শেষ বেলায় জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে আলোকস্বল্পতা এবং বৃষ্টির বাঁধায় পড়েছিল বাংলাদেশ। আজ পঞ্চম দিনেও ছিল বৃষ্টির শঙ্কা। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সঠিক সময়েই মাঠে গড়ায় খেলা। এরপর দ্রুত দুই ওপেনারকে হারায় বাংলাদেশ। এরপর দলের হাল ধরেন মমিনুল হক এবং নাজমুল শান্ত।  
0 Comments